হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আত্মত্যাগ কেবল ইতিহাসের এক বেদনাবিধুর অধ্যায় নয়—বরং তা যুগে যুগে জালিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো এবং হকের পক্ষে শিয়া-সুন্নি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের জন্য এক চিরন্তন প্রেরণা।
১. কারবালা: হক ও বাতিলের চিরন্তন প্রান্তর
ইসলামের ইতিহাসে কারবালা কেবল একটি যুদ্ধক্ষেত্র নয়; এটি হক ও বাতিল, ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য নির্ধারণকারী এক চিরন্তন প্রতীক। ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের আত্মত্যাগ আমাদের শিক্ষা দেয়—ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকা এবং অন্যায়ের সামনে কখনোই মাথা নত না করা ঈমানের অনিবার্য দাবির অন্তর্ভুক্ত। কারবালার এই চেতনা আজও মুসলিম উম্মাহকে ত্যাগ, সাহস ও সত্য প্রতিষ্ঠার শপথে জাগ্রত করে।
২. আরবাইন: হকপন্থী প্রতিবাদী মানবতার মহাসমাবেশ
হকপন্থী চেতনার জীবন্ত প্রকাশ ঘটে আরবাইন সফরে। প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ মাজহাব, ভাষা ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতি ভালোবাসা জানাতে কারবালায় পৌঁছায়। আরবাইন আজ আর কেবল শোকের দিন নয়—এটি বিশ্বমানবতার জুলুমবিরোধী প্রতিবাদের এক অনন্য মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে।
৩. গাজা: কারবালার আধুনিক প্রতিচ্ছবি
আধুনিক বিশ্বে ফিলিস্তিনের গাজা যেন কারবালারই নতুন সংস্করণ। জায়োনিস্ট বাহিনীর অব্যাহত বর্বরতায় হাজার হাজার শিশু, নারী ও নিরীহ মানুষ শহীদ হচ্ছেন। এই পটভূমিতে কারবালার শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জালিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কেবল রাজনৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ঈমানের দাবি।
৪. শিয়া-সুন্নি ঐক্য: কারবালার আহ্বান
কারবালার বার্তা কেবল শিয়াদের জন্য নয়—বরং তা সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য। ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন ইসলামের সার্বজনীন নৈতিকতার প্রতিনিধি। তাই শিয়া-সুন্নি বিভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হওয়াই আজ সময়ের দাবি। এই ঐক্যই উম্মাহকে বিভক্তির জাল ছিঁড়ে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিতে পারে।
৫. জায়োনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র
জায়োনিস্ট ইসরায়েল ও তাদের পশ্চিমা মদদদাতা শক্তিগুলো মুসলিম বিশ্বে ফিতনা ছড়িয়ে উম্মাহকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ও গাজায় এই আগ্রাসনের চিহ্ন সুস্পষ্ট। এ অবস্থায় কারবালার চেতনায় বলীয়ান হয়ে উম্মাহকে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
৬. মজলুমের পাশে দাঁড়ানোই কারবালার শিক্ষা
কারবালা আমাদের শেখায়—চুপ থাকা নয়, বরং নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানোই মুসলমানের ধর্মীয় দায়িত্ব। গাজার নিষ্পেষিত জনপদের আর্তনাদ আমাদের বিবেককে নাড়া না দিলে, সেটি ঈমানের দুর্বলতারই ইঙ্গিত। আরবাইন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: হুসাইনের পক্ষে না ইয়াজিদের পক্ষে—প্রত্যেককে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৭. ঐক্য ও প্রতিবাদের শক্তিতে মুক্তির পথ
সবশেষে, কারবালার চেতনা আজ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। মুসলিম উম্মাহ যদি সত্য, সংহতি ও সাহসের শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে গাজাসহ বিশ্বের সব মজলুমদের মুক্তি সুনিশ্চিত। কারবালাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠুক একটি নতুন, প্রতিবাদী ও সহমর্মী উম্মাহ—এটাই আজকের সময়ের দাবি।
হাওজা নিউজ এজেন্সি | রাসেল আহমেদ রিজভী
আপনার কমেন্ট